বমন (Vomiting) কারণ ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ

কারণ:- বমন (Vomiting) বিশেষ কোন রোগ নয়। ইহা অন্যান্য রোগের একটি উপসর্গ মাত্র। বিভিন্ন কারণে এই লক্ষণটি রোগীর মধ্যে প্রকার লাভ করতে পারে। অগ্নিমান্দ্য, অপরিমিত ভোজন, অনিয়মিত ভোজন। নানা প্রকার রোগভোগজনিত দুর্বলতা। স্নায়ুমণ্ডলের রোগ। শোক, দুঃখ, আঘাত, দুশ্চিন্তা, দুর্ঘটনাজনিত মানসিক কারণ। অতিরিক্ত জ্বর বা নানা জাতীয় জ্বর, উদরাময়, অজীর্ণতা, কোষ্ঠকাঠিণ্য ইত্যাদি। শিশুদের বমির ক্ষেত্রে ক্রিমির রোগ। অতিরিক্ত পরিশ্রম, ভ্রমন ইত্যাদি। গভাবস্থা, মস্তিষ্কজনিত রোগ, মুত্র গ্রন্থি প্রভৃতি কারণ। বিষাক্ত দ্রব্য ভক্ষণ, পাকাশয়ের উত্তেজনা।

 

লক্ষণানুসারে বমন (Vomiting) এর হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচন:-

ইপিকাক 3/6 ১ ঘন্টা পর পর: অবিরত বমি এবং বমি ভাব। বমিতে খাদ্য দ্রব্য, পিত্ত, রক্ত, শ্লেষ্মা, জেলির মত। গুরুপাক দ্রব্য খেয়ে- পিঠা ইত্যাদি। জিহ্বা পরিষ্কার, পিপাসার অভাব, সরস ও প্রচুর লালাস্রাব।

ফসফরাস 6/30 ২ ঘন্টা পর পর: যখনই ঠাণ্ডা জল উদরে প্রবেশ করে তখনই বমি হয়। মুখ ভর্তি হয়ে ভুক্ত দ্রব্য উঠে আসে। বুকে, উদরে শূন্যতাবোধ, জ্বালাপোড়া। দুই স্ক্যাপুলার মাঝখানে জ্বালাপোড়াবোধ।

ভিরেট্রাম এ্যাল্বাম 3/6 ১ ঘন্টা পর পর: অতিরিক্ত মদ্যপান হেতু। উদরাময় তৎসহ বমি, কিছুতেই থামতে চায় না। বমি তিক্ত, ফেনাময়, সাদাটে, হলুদ, শ্লেষ্মাযুক্ত। ঠাণ্ডা খাদ্য পছন্দ করে, নাকের ডগা ও মুখমণ্ডল বরফের মত ঠাণ্ডা।

বিসমাথ 6/30 ১ ঘন্টা পর পর: অন্যনালীর উত্তেজনা, শ্বাসরোধভাব তৎসহ বমি। জল পাকাশয়ে যাওয়া মাত্রই বমি আরম্ভ। জলপানের পরই, যে কোন তরল পদার্থ বমি হয়ে যায়। জিহ্বা সাদা ময়লার প্রলেপ, বেদনাহীন উদরাময়, প্রবল পিপাসা।

এন্টিমটার্ট 1x, 3x ৩ ঘন্টা পর পর: ঠাণ্ডা ও ঠাণ্ডা পরিবেশ থেকে রোগ উৎপত্তি। প্রচুর পরিমানে বমি, শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ বমি। ডানপাশে চেপে গুলে বমি হয় না। পিপাসা, মুখ দিয়ে লাল পড়ে, বুকে শ্লেষ্মা ঘড়ঘড় করে।

ইথুজা সিনাপিয়াম 3/6   ১ ঘন্টা পর পর: শিশুদের জন্য উপযোগী, দন্ত উদ্‌গমন কালে। হঠাৎ প্রচণ্ড বমি, বমির সঙ্গে সাদা সাদা দুধের পদার্থ। দুধ পান করা মাত্রই বমি। প্রচুর পরিমানে সাদা ফেনাময় বমি। বমির সঙ্গে ঘাম, দুর্বলতা, চোখের তারকা নিচের দিকে আকৃষ্ট।

আর্সেনিক 3/6 ৩ ঘন্টা পর পর: পচা ফল, আইসক্রিম, বরফ,  অতিরিক্ত ধূমপানহেতু। পানি পাকস্থলিতে গেলেই বমি হয়, উত্তেজনা। বমিতে সবুজ শ্লেষ্মা, রক্ত, পিত্ত, কালো বর্ণের। দুধ খেতে চায়। পেটে ভয়ানক জ্বালাপোড়া, কিছুক্ষন পর পর সামান্য পরিমান পানি পান করে।

চায়না 30 ২ ঘন্টা পর পর : পরিপাক ক্রিয়ার গোলযোগ, ফলভক্ষণ হেতু। বমি অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত, হলুদবর্ণ, সবুজাভ। উদরে বায়ু জমে, লিভার, প্লীহা বর্ণিত। এক হাত বরফের মত ঠাণ্ডা, অন্য হাত উষ্ণ।

নাক্সভম 30 ৩ ঘন্টা পর পর: রাত জাগরণ, অপরিমিত, উগ্রমশলাযুক্ত খাদ্য হেতু। পাকস্থলীতে বেদনা, ভারবোধ, মুখ দিয়ে জল। চর্বি জাতীয় খাদ্য পছন্দ, শীত শীত ভাব।কষ্টকর উদ্‌গার, বমি করতে চায় কিন্তু পারে না।

ক্যাডমিয়াম সালফ 3/6 : পাকাশয়িক লক্ষণ এবং বমি, গা বমি বমি। পাকস্থলীতে বেদনা, ভারবোধ, মুখ দিয়ে জল। চর্বি জাতীয় খাদ্য পছন্দ, শীত শীত ভাব। কষ্টকর উদ্গার বমি করতে চায় কিন্তু পারে না।

 

বমন (Vomiting) এর বায়োকেমিক ঔষধ

নেট্রাম মিউর 3x ২টা করে বড়ি সামান্য গরম জয়ে দিনে ৪ বার : অম্লবমি, কোন খাদ্য কণা বা ঐ জাতীয় কোন জিনিষ বমির সঙ্গে পড়ে না। শুধু জলের মত অম্ল বমি, বমির মধ্যে দধির মত দানা দানা, চাকা চাকা পদার্থ। বমির সঙ্গে যে শ্লেষ্মা নির্গত হয় উহা স্বচ্ছ ও জলের মত।

কালকেরিয়া ফ্লোর 6x ৩ টা করে বড়ি সামান্য গরম জলে দিনে ৩ বার: বমি ও বমির সঙ্গে অজীর্ণ, খাদ্য দ্রব্য নির্গত। দস্ত উদ্‌গমন কালে বমি। ফেরাম ফসে যদি উপকার না হয় তবে ইহার প্রয়োজন। প্রয়োগ কালে লক্ষণগুলো ভাল করে বিবেচনার প্রয়োজন।

ফেরামফস 3x ২টা করে বড়ি সামান্য গরম জলে দিনে ৪ বার: বমির সঙ্গে রক্ত পড়ে। রক্ত ও জল আঠাল। যা খায় তাই বমি করে, টকটক গন্ধ আসে। কোন কিছু খাবার পরই বমি করে। বমির সঙ্গে অজীর্ণ খাদ্য দ্রব্য পড়ে। বমির সঙ্গে রোগীর গায়ে জ্বর থাকতে পারে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

 

আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা:- কোন বিষাক্ত খাদ্য বা বিষ পেটে গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে বের করে দেয়া। প্রচুর পরিমানে জলপান করিয়ে বমি করানো দরকার। কোন বিষাক্ত পদার্থ পাকস্থলীতে গেলে আরো ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এইরূপ অবস্থায় রোগীকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ। পাকস্থলীতে উত্তেজনার ভাব দেখা দিলে এবং বমি হতে থাকলে গরম জল পানে উপকার। ছোট ছোট বরফের টুকরো চুষতে দিলে উপকার। অনেক সময় পাকস্থলী বিশ্রাম পেলেই বমির উপশম হয়।

 

পথ্য:- বমি নিবারণ করতে অনেক সময় শীতল দ্রব্য, ডাবের জল, মুড়ি ভেজানো জল দেয়া যায়। বমির প্রবল অবস্থায় ১০/১৫ মিনিট অন্তর এবং উপশম হলে ২/৩ ঘন্টা অন্তর ঔষধ ব্যবহার করা উচিত। ঔষধ পেটে না থাকলে চূর্ণাকারে বা বটিকা কারে সেবন করা উচিত। বমি অবস্থায় কোন কিছু খেতে নেই। বমি সম্পূর্ণ বন্ধ হলে এবং খিদে পেলে লঘু পথ্য দেয়া উচিত। এমতবস্থায় রোগীকে তরল হালকা খাদ্য বা বরফ দেয়া যায়। মুড়ি ভেজান পানি, ডাবের পানি, সুমিষ্ট ফলের রস, মেথি ভেজান পানি ইত্যাদি উপকারী পথ্য। এছাড়াও লেবুর রস, বরফ মিশ্রিত সরবৎ এবং অন্যান্য হালকা পুষ্টিকর খাদ্য দেয়া যায়। খেয়ে বমি না করে এমন যে কোন তরল পথ্য রোগীকে দেয়া যায়।

Related posts

Leave a Comment